জুলাই-আগস্টের গণহত্যা, গুম, গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীরা পুনরায় দেশ পরিচালনা করুক তা দেশের অধিকাংশ মানুষ চায় না বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার।
মঙ্গলবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) আয়োজিত "আরএফইডি টক"-এ তিনি এ মন্তব্য করেন। আরএফইডি'র সভাপতি একরামুল হক সায়েমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ূন কবীর।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, যারা দেড় হাজার মানুষকে হত্যা, গুম ও গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘণ করেছে, তারা পুনরায় দেশ শাসন করুক তা অধিকাংশ মানুষ চায় না। গুরুতর মানবতাবিরোধী অপরাধ যারা করেছে, যারা বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড করেছে, তারা যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে, সেই সুপারিশ নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হয়েছে। তবে কাউকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমরা চাই যারা অন্যায় করেছে তারা যেন বিচারের আওতায় আসে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবে কি করবে না সেই সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের। তবে যারা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার ব্যাপারে ভয়াবহ ভূমিকা পালন করেছেন। তারা যেন নির্বাচনী অঙ্গন থেকে বিতাড়িত হন, এটা আমরা চেষ্টা করেছি।
সাংবাদিকদের অপর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্ত কমিশন গঠন করে নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বিগত ২০১৪, ১৮ ও ২৪ সালের নির্বাচনে যারা কারচুপিতে সহায়তা করেছে, তাদের বিচার করা হোক। তখনকার কমিশন অন্যায় করলে তাদেরও বিচার হবে। কেউ অতীতের জায়গায় ফিরে যেতে চায় না। আমরা অতীতের কারচুপি নির্বাচনের পুনরাবৃত্তি চাই না। নির্বাচনি অঙ্গনকে দুর্বৃত্তায়ন মুক্ত করতে হবে।
তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দোষী সাব্যস্ত হলে তারা যেন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারেন। যারা কারাগারে রয়েছেন তারা ছাড়া অন্যরা সশরীরে উপস্থিত হয়ে যেন মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেন সেই সুপারিশ করা হয়েছে। ৪০ ভাগের কম ভোট পেলে পুনরায় নির্বাচন করা; অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বচ্ছ হতে হবে, গণতন্ত্রের চর্চা করতে হবে এবং দলের সদস্যদের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে।
সীমানা পুনর্নির্ধারণের বিষয়ে তিনি বলেন, সীমানা পুনর্নির্ধারণ করা প্রয়োজন। এ জন্য একটি কমিশন গঠনের সুপারিশ করা হয়েছে।
পোস্টার ব্যবহার বন্ধের সুপারিশ করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পোস্টার পরিবেশ ধ্বংস করে। ডিজিটাল মাধ্যমে প্রচারণা হতে পারে। সরকারী গণমাধ্যমে সব প্রার্থীর প্রচারণা করার সুপারিশ করা হয়েছে।
৪ মাস মেয়াদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জাতীয় সংসদ ও সব স্থানীয় নির্বাচন করা সম্ভব কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এই প্রস্তাব বর্তমান সময়ের জন্য নয়। এটি ভবিষ্যতের জন্য। এ ছাড়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিষয়টিও ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
না ভোট, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নির্দলীয় প্রতীকে করার সুপারিশ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
নির্বাচন কমিশনকে দায়বদ্ধ করার সুপারিশ করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ২০১৪, ১৮ ও ২৪ সালের নির্বাচনে কমিশন শপথ ভঙ্গ করেছে। আমাদের সুপারিশে এ বিষয়ে কোনো সুস্পষ্ট কোনো সুপারিশ করা হয়নি। অন্যায় করে কেউ যাতে পাড় পেয়ে না যায় সে সুপারিশ করা হয়েছে।