ঢাকার গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ও যাত্রী ভোগান্তি কমাতে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু হয় ঢাকা নগর পরিবহনের। পরিকল্পনা ছিল ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ রাজধানীকে একটি কোম্পানির আওতায় আনা। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও এই পরিকল্পনা এখনো আলোর মুখ দেখেনি। তবে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) নগর পরিবহনের প্রস্তাবিত ৪২টি রুটই এখন খুলে দিতে চাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে তাঁরা বাস মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করে রুট বিন্যাস করবেন।
আজ রোববার রুট রেশনালাইজেশন প্রকল্পের পরিচালক ধ্রুব আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, আজ তাঁরা রুট রেশনালাইজেশন কমিটির অধীনে সভা করেছেন। সভায় বাস মালিকদের বক্তব্য শোনা হয়েছে। বাস মালিকেরা অনেক রুট নতুন করে বিন্যাস করতে বলেছেন। কমিটি তাঁদের কথা শুনেছে। এখন এ বিষয়ে আরও আলোচনা করে পরিকল্পনা ঠিক করা হবে।
ধ্রুব আলম বলেন, ‘আমরা ৪২টি রুটই ওপেন (খুলে) করে দিচ্ছি। একটি রুটে একটি মাত্র বাস কোম্পানিই গাড়ি চালাতে পারবে। এ ক্ষেত্রে যারা রুট ভায়োলেশন (শৃঙ্খলা ভঙ্গ) করবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
ডিটিসিএ সূত্র বলছে, ঢাকায় যখন নগর পরিবহন চলাচল শুরু হয় তখন বাসের মোট রুট ছিল ১১০টি। পরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২০ টিতে। বর্তমানে ঢাকায় প্রায় ১৩০টি রুটে বাস চলাচল করছে। এসব রুট কমিয়ে ৪২টি রুট করবে ডিটিসিএ।
২০১৬ সালের শুরুতে ছয়টি কোম্পানির অধীনে ছয় রঙের বাস নামানোর উদ্যোগ নেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) তৎকালীন মেয়র (প্রয়াত) আনিসুল হক। ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর তাঁর মৃত্যুর পর থেমে যায় প্রকল্প। এরপর ২০২০ সালে বাস রুট রেশনালাইজেশন বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে ৯টি ভিন্ন ভিন্ন রঙের, ২২টি কোম্পানি ও ৪২টি রুটের প্রস্তাব দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে নগর পরিবহন ৬টি (রুট ৩৪ টি) ও শহরতলি পরিবহন ক্লাস্টার ৩টি (রুট ৮ টি)। নগর পরিবহনের বর্তমান ৫৪টি রুটকে সমন্বয় করে ৮টি রুটে পরিণত করা হয়েছে, যেগুলোর রুট নম্বর ২১ থেকে ২৮। আর এটি দেখভাল করছে ডিটিসিএ।
২০২১ সালে ২১ নম্বর রুট (ঘাটারচর–মোহাম্মদপুর–জিগাতলা–প্রেস ক্লাব–মতিঝিল–যাত্রাবাড়ী–কাঁচপুর) পাইলট প্রকল্প হিসেবে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’ নামে প্রথম বাস সেবা শুরু হয়। এরপর আরও তিনটি রুটে বাস চালু করা হয়। তবে চলতি মাসের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢাকা নগর পরিবহনের সব রুট বন্ধ হয়ে যায়। এখনো নগর পরিবহনের বাস চালু হয়নি।
এর আগে যখন নগর পরিবহন চালু হয় তখন ২১ নং রুটে বিআরটিসির ৩০টি ডবল ডেকার এবং ট্রান্স সিলভা পরিবহনের ২০টি বাস দিয়ে পরিষেবা চালু করার কথা ছিল। পরে দুই মাসের মধ্যে এতে যুক্ত হওয়ার কথা ছিল ১০০টি বাস। তবে দীর্ঘ সময়ে এই রুট ৫০টি বাসেরও মুখ দেখেনি, ট্রান্স সিলভা এখন আর রাস্তায় নেই। এরপর ২২ নম্বর রুটে অভি মোটরসের বাস চলাচল শুরু করে। এই রুটে তাদের ৫০টি বাস চলার কথা থাকলেও শুরু হয়েছিল ৩০টি দিয়ে। পরবর্তীতে বাসের সংখ্যা না বেড়ে উল্টো কমে দাঁড়িয়েছিল ২০ টিতে। আর ২৬ নম্বর রুটে বিআরটিসির ৫০টি ডবল ডেকার বাস দেওয়ার কথা ছিল। তবে বন্ধ হওয়ার আগে পর্যন্ত বাস চলেছে সর্বোচ্চ ২৫টি।
অবৈধ বাসের দৌরাত্ম্যে নগর পরিবহন সফল হতে পারছে না উল্লেখ করে প্রকল্প পরিচালক ধ্রুব আলম বলেন, ‘আমাদের বাস পরিবহন সেবার ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনায় সমস্যা আছে। দক্ষ জনবল ও অভিজ্ঞ কর্মকর্তার সংখ্যা অপ্রতুল।
আজকের সভায় গণপরিবহন খাতে শৃঙ্খলা আনতে স্টপেজ ছাড়া যত্রতত্র বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা ও দুই স্টপেজের মধ্যবর্তী স্থানে বাসের দরজা বন্ধ রাখার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়। বলা হয় ইতিমধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মাধ্যমে ১১০ টিরও বেশি বাস স্টপেজ তৈরি করা হয়েছে। প্রয়োজন অনুসারে স্থান চিহ্নিত করে আরও নির্মাণ করা হবে। সচল ও অচল বাস রুটগুলো ২০২১ সাল থেকে এ পর্যন্ত হালনাগাদ করা হচ্ছে। এর ওপর ভিত্তি করে ও ডিটিসিএ কর্তৃক প্রস্তুতকৃত প্রস্তাবের সমন্বয়ে অচল রুট বাতিল ও নতুন রুটের পরিকল্পনা প্রয়োজন বোধে আংশিক পরিবর্তন করে হালনাগাদ করা হবে
সভায় জানানো হয়, কাঁচপুর ও বাঘাইরে বাস টার্মিনাল ও ডিপো নির্মাণের লক্ষ্যে বিশদ নকশা প্রস্তুতের জন্য আগ্রহীদের সাড়া দেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে ডিএসসিসি থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। আন্তজেলা বাস টার্মিনালের জন্য নির্ধারিত কাঁচপুরের জমিটি সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদপ্তর থেকে ডিএসসিসির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যেই সেখানে অস্থায়ীভাবে আন্তজেলা বাস রাখা সম্ভব হবে। এ ছাড়া হেমায়েতপুর ও গ্রাম ভাটুলিয়া বাস টার্মিনাল ও ডিপো দুটি নির্মাণ করবে ডিএনসিসি। এ উদ্দেশ্যে প্রকল্প গ্রহণের লক্ষ্যে পিডিপিপি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে এবং জমি দুটি অধিগ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় দলিলাদি ঢাকা জেলা প্রশাসন থেকে সংগ্রহও করা হয়েছে।