admin ৩০ জুলাই ২০২৫ , ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ
স্টাফ রিপোর্টার : আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরও বিতর্কিত ব্যক্তিদের প্রশাসনিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ পদে বহাল থাকা নিয়ে দেশজুড়ে ক্ষোভ বিরাজ করছে। সেই আলোচনার মধ্যেই উঠে এসেছে আরেক আলোচিত নাম সিদ্ধেশ্বরী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর শেখ জুলহাস উদ্দিন। আওয়ামী শাসনামলে দুর্নীতির অভিযোগ এবং ক্ষমতাসীন দলের দোসর হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। বর্তমান সময়ে তার অপসারণের দাবিতে সিদ্ধেশ্বরী কলেজের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভে উত্তাল শিক্ষাঙ্গন
সিদ্ধেশ্বরী কলেজ চত্বর ও আশপাশের সড়কগুলোতে গেল কয়েকদিন ধরে ব্যানার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে পুরো এলাকা। সেখানে লেখা রয়েছে, “দুর্নীতিবাজ অধ্যক্ষ শেখ জুলহাসের অপসারণ চাই”, “আওয়ামী দোসরের জায়গা শিক্ষাঙ্গনে নয়”, এমন নানা স্লোগানযুক্ত ব্যানারে প্রতিবাদ জানাচ্ছে কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা।
ওই কলেজের একজন শিক্ষার্থী বলেন, “অধ্যক্ষ শেখ জুলহাস এই কলেজকে আওয়ামী লীগের ক্যাডার তৈরির কারখানায় পরিণত করেছিলেন সেই আমলে। এখন সময় হয়েছে তার বিদায়ের।

অভিযোগের পাহাড়: দুর্নীতি, পক্ষপাত ও রাজনৈতিক দালালি
কলেজ সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তিনি রাজনৈতিক নেতা ও প্রভাবশালী মন্ত্রীদের ছত্রছায়ায় থেকে নিজের অবস্থান পোক্ত করেন। তার বিরুদ্ধে কলেজে অনিয়মিত নিয়োগ, টেন্ডার দুর্নীতি, এবং ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের পক্ষপাতদুষ্ট কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়াও, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে শেখ জুলহাসের আওয়ামী লীগের মন্ত্রী, এমপি ও কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে তোলা অসংখ্য ছবি। এমনকি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিভিন্ন সভা সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলনেও তাকে সামনের কাতারে বসে থাকতে দেখা গেছে, যা তার রাজনৈতিক আনুগত্যের জ্বলন্ত প্রমাণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আবার, শেখ হাসিনার আমলে নিজের বংশীয় নাম শেখ ব্যবহার করতেন হাসিনার সাথে মিলিয়ে। এর একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল স্বার্থ হাসিল করা। এছাড়া, তিনি আওয়ামী
লীগের শিক্ষক সংগঠন বাকশিস এর বর্তমানে ঢাকা মহানগরীর আহ্বায়ক। আওয়ামী লীগের পরিচয়ে তিনি হাসিনার আমলে হয়েছিলেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট সদস্যসহ বাগিয়ে নেন আরো অনেক পদ।
রাজনৈতিক চাপের অভিযোগ
ছাত্ররাজনীতি সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জানিয়েছে, অধ্যক্ষ জুলহাস উদ্দিন কলেজে বিরোধীদলের ছাত্রসংগঠনগুলোর কার্যক্রম দমন করতেন এবং তোষণ করতেন আওয়ামীপন্থী ছাত্র সংগঠনকে। “আমাদের কোন অনুষ্ঠান করতে দিত না, কিন্তু ছাত্রলীগের সবকিছুতে অনুমতি দিতেন উনি,” বললেন এক শিক্ষার্থী নেতা।
আন্দোলনের ঢেউ বাড়ছে

বর্তমানে আন্দোলন শুধু শিক্ষার্থীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই; রাজনৈতিক দলগুলোর তরফ থেকেও জোরালো দাবি উঠেছে তার অপসারণের। প্রগতিশীল ছাত্র জোট, গণতান্ত্রিক শিক্ষক ফোরাম ও একাধিক রাজনৈতিক দলের ঢাকা মহানগর ইউনিট অধ্যক্ষ শেখ জুলহাসের অপসারণ দাবিতে ফুসে উঠেছেন।
প্রশাসন আর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও এখনও তিনি বহাল তবিয়তে দায়িত্ব পালন করছেন—এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আন্দোলনকারীরা। তারা বলছেন, শেখ জুলহাসের বহাল থাকা প্রমাণ করে প্রশাসনের ভেতরে এখনো একটি ‘আওয়ামী প্রভাবশালী চক্র’ সক্রিয় আছে।
অধ্যক্ষের প্রতিক্রিয়া
এ বিষয়ে অধ্যক্ষ শেখ জুলহাস উদ্দিন কোনো গণমাধ্যমে সরাসরি মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে একটি ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, “তিনি এই আন্দোলনকে একটি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন এবং তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ ভিত্তিহীন।
আওয়ামী শাসনামলে গড়ে ওঠা বিতর্কিত ব্যক্তিদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে থাকা নিয়ে দেশজুড়ে বাড়ছে প্রশ্ন। সিদ্ধেশ্বরী কলেজের অধ্যক্ষ শেখ জুলহাস উদ্দিনকে ঘিরে চলমান আন্দোলন এই প্রেক্ষাপটেই বড় এক ইঙ্গিত দিচ্ছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখন কোন পথে এগোয়—তা দেখার অপেক্ষায় গোটা কলেজপাড়া।

















