আইন-আদালত

কবিরাজের দোকানে চিকিৎসা নিতে গিয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণির ২ ছাত্রী ধর্ষণের শিকার, অভিযুক্ত গ্রেফতার

  admin ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ , ১:১৮ অপরাহ্ণ প্রিন্ট সংস্করণ

মাহবুবুজ্জামান সেতু : নওগাঁর মান্দায় এক গ্রাম্য কবিরাজের বিরুদ্ধে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর এই ঘটনা ঘটলেও, লোকলজ্জা ও আতঙ্কে ছাত্রীরা বিষয়টি গোপন রাখে। পরে গত ২৪ সেপ্টেম্বর পরিবারের কাছে ঘটনা প্রকাশ করলে ২৫ সেপ্টেম্বর অভিযুক্ত কবিরাজকে আটক করে উত্তেজিত জনতা। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে কবিরাজকে হেফাজতে নেয়। এ ঘটনায় এক ছাত্রীর বাবা মান্দা থানায় এজাহার দায়ের করেছেন।

ঘটনার বিবরণ:

​এজাহার সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী দুই ছাত্রীর মধ্যে একজনের নাম মোছাঃ মারুফা খাতুন (১৩), সে চৌবাড়ীয়া-মালশিরা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা মোঃ ইকবাল (৫২), সাং-হোসেনপুর, ০১নং ভারশোঁ ইউপি, মান্দা, নওগাঁ। অপর ছাত্রী মোছাঃ সামিয়া আক্তার ফারহানা (১৩), তার সহপাঠী। অভিযুক্ত কবিরাজের নাম মোঃ সাভার আলী কবিরাজ সাভার (৫৫), পিতা-মৃত: মজিবর রহমান, স্থায়ী সাং-হোসেনপুর, বর্তমান সাং-দেবীপুর, মান্দা, নওগাঁ। সে চৌবাড়ীয়া বাজারে ভেষজ ঔষধের দোকান পরিচালনা করে।

​গত ১৮/০৯/২০২৫ তারিখ সকাল অনুমান ০৯.০০ ঘটিকার সময় মারুফা ও সামিয়া স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে রওনা হয়। পথিমধ্যে মারুফার পেট ব্যথা শুরু হলে জরুরীভাবে ঔষধ নেওয়ার জন্য তারা সকাল অনুমান ০৯.১৫ ঘটিকার সময় কবিরাজ সাভার আলীর দোকানে প্রবেশ করে।

​অভিযোগে বলা হয়েছে, আসামী সাভার আলী অসৎ উদ্দেশ্যে মারুফার অনেক সমস্যা আছে বলে তার সহপাঠী সামিয়াকে দোকানের বাহিরে বেঞ্চের উপর বসিয়ে রাখে। এরপর সে মারুফাকে তার চেম্বারের খাটের উপর শুইয়ে পায়জামা খুলে তলপেটসহ যৌনাঙ্গ দেখার নামে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণের পর সে মারুফাকে পায়জামা পরিয়ে দিয়ে বলে যে, তার পেট ব্যথা ঠিক হয়ে যাবে।

​এরপর আসামী কৌশলে মারুফাকে বাহিরে বসিয়ে তার সমস্যার কথা সামিয়াকে বলবে বলে তাকে চেম্বারের মধ্যে ডেকে নেয়। সকাল অনুমান ০৯.৪৫ ঘটিকার সময় সামিয়া চেম্বারে প্রবেশ করলে আসামী মারুফার কোথায় সমস্যা দেখানোর কথা বলে একই কৌশলে সামিয়ারও পায়জামা খুলে খাটের উপর শুইয়ে জোর পূর্বক ধর্ষণ করে।
​সকাল অনুমান ১০.০০ ঘটিকার সময় আসামী দুই ছাত্রীকে স্কুলে পাঠিয়ে দেয় এবং বলে যে, কোন সমস্যা হলে যেন তার নিকট থেকে ঔষধ নেয়।

ঘটনা প্রকাশ ও অভিযুক্ত গ্রেফতার:

​ধর্ষণের শিকার দুই নাবালিকা ছাত্রী লোকলজ্জার ভয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি পরিবারের কাউকে জানায়নি। মারুফা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করলে গত ২৪/০৯/২০২৫ তারিখ রাত অনুমান ০৮.০০ ঘটিকার সময় তার মা কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ করলে মারুফা তার ও তার সহপাঠী সামিয়ার ধর্ষণের বিস্তারিত প্রকাশ করে। পরে সামিয়াকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হলে সেও ধর্ষণের শিকার হওয়ার কথা স্বীকার করে।

​ঘটনাটি জানাজানি হওয়ার পর গ্রামের উত্তেজিত জনতা গত ২৫/০৯/২০২৫ তারিখ সকাল অনুমান ০৯.০০ ঘটিকার সময় আসামীর দোকানে গিয়ে তাকে আটক করে এবং সামান্য মারপিট করে। খবর পেয়ে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯-এ কল করা হলে মান্দা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে উত্তেজিত জনতার কাছ থেকে অভিযুক্ত কবিরাজকে নিজ হেফাজতে নেয়। জনতার মারপিটে জখম হওয়ায় পুলিশ তাকে মান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদান করে।

মামলা দায়ের:

​ধর্ষণের শিকার মারুফার বাবা মোঃ ইকবাল এই বর্বরোচিত ঘটনার বিচার চেয়ে আসামী মোঃ সাভার আলী কবিরাজ সাভারের বিরুদ্ধে মান্দা থানায় এজাহার দায়ের করেছেন। স্থানীয় জনতা ও সহপাঠী সামিয়ার পরিবারের সদস্যসহ কয়েকজন ঘটনার সাক্ষী হিসাবে এজাহারে নাম অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। পুলিশ অভিযুক্তকে আটক করে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করছে।

আরও খবর:

Sponsered content