ঢাকা, শুক্রবার, মে ৩, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গরমে ঢেঁড়স খেলে প্রাণঘাতী রোগ থাকবে দূরে

জনতার আলো, ফিচার ডেস্ক:

প্রকাশিত: ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ০২:৫৭ পিএম

গরমে ঢেঁড়স খেলে প্রাণঘাতী রোগ থাকবে দূরে

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহে সবাই অস্থির। গরমের কারণে অনেকেই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হচ্ছেন—যেমন পানিস্বল্পতা, প্রস্রাবে সংক্রমণ, হিট স্ট্রোক, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া, আমাশয়, গরমজনিত সর্দি–কাশি, জ্বর, ইনফ্লুয়েঞ্জা, জন্ডিসসহ প্রাণঘাতী রোগে। তাই গরমের দিনগুলোতে সুস্থ থাকার জন্য অবশ্যই খাদ্যাভ্যাসের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা গ্রহণ করতে হবে। চিকিৎসকের মতে, প্রচণ্ড গরমে ২৪ ঘণ্টায় অন্তত দুই থেকে আড়াই লিটার পানি পান করতে হবে। অতিরিক্ত ঘামে ইলেকট্রোলাইট ইমব্যালেন্স বা শরীরে লবণের ভারসাম্য কমে যেতে পারে। এতে বয়স্ক ও গর্ভবতী নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়। তাদের তাপপ্রবাহ এড়িয়ে চলতে হবে। অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পানি পান থেকে বিরত থাকতে হবে। ছায়া-শীতল পরিবেশে থাকতে হবে বলে জানিয়েছেন।

গরমের সময়ে শরীরের তাপমাত্রায় সহনশীলতা রাখার জন্য শরীর ঠাণ্ডা রাখা জরুরি। গরমের সময়ে সুস্থ থাকতে খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনা জরুরি। তাপদাহের এ সময়ে ফলমূল, পানির পাশাপাশি এমন সবজিও খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে যা খেলে ঠাণ্ডা থাকবে শরীর।

গরমে সবচেয়ে সহজপাচ্য সবজির মধ্যে অন্যতম হল ঢেঁড়স। ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, উপকারী ফাইবার সমৃদ্ধ ঢেঁড়সের উপকারিতা শুনলে চমকে যাবেন। গরমে শরীর সুস্থ রাখতে তাই রোজ পাতে থাকুন ঢেঁড়সের পদ। গরমে ঢেঁড়স সবজির গুণে, হার্টের অসুখ-ক্যানসারের মতো প্রাণঘাতী রোগ থাকবে দূরে।

ঢেঁড়স গাছ একটি বর্ষজীবী উদ্ভিদ। ঢেঁড়সের বৈজ্ঞানিক নাম অ্যাবেলমোছাস এসসিউলেনটাস। ফুল হয় ৪-৮ সেমি চওড়া। প্রতিটি ফুলে ৫টি পাপড়ি থাকে এবং পাপড়ির রং সাদাটে হলুদ। প্রতিটি পাপড়ির কেন্দ্রে লাল বা গোলাপি বিন্দু থাকে। ঢেঁড়স ফল প্রায় ১৮ সেমি দীর্ঘ, দেখতে ক্যাপসুলের মতো এবং এর ভেতরে অসংখ্য বিচি থাকে।

ঢেঁড়সের আদি নিবাস ইথিওপিয়ার উচ্চভূমি এলাকায়। ঢেঁড়স ইউরোপে লেডিস ফিঙ্গার নামে পরিচিত। ঢেঁড়সকে ইংরেজিতে ওকরা বলা হয়। ওকরা নামটি পশ্চিম আফ্রিকা থেকে এসেছে। আফ্রিকার বান্টু ভাষায় এটাকে বলা হয় কিঙ্গুম্বো। আরবি ভাষায় এর নাম বামিয়া । দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এটিকে ভেন্ডি বা ভিন্ডি বলা হয়।

ঢেঁড়সে রিবোফ্লাবিনের পরিমাণ বেগুন, মুলা ও টমেটোর চেয়ে বেশি আছে। এটা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। পেটের প্রস্রাব ও পায়খানা পরিষ্কার করতে ঢেঁড়শের অনেক গুণ। খুসখুসে কাশিতেও উপকার করে এই সবজিটি। হজমশক্তি বাড়ায়, বাতের প্রকোপ কমায়। প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের ক্ষরণ দূর করে এই ঢেঁড়স।

ঢেঁড়সে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ফাইবার। যা ডায়াবেটিসকে দূরে রাখে। এ সবজির গ্লাইসেমিক সূচক কম। তাই রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। ‘আমেরিকান ডায়াবিটিস অ্যাসোসিয়েশন’-এর মত অনুযায়ী, হাই ক্যালোরি, লো ফ্যাটের এই সবজি ডায়াবেটিসদের জন্য খুবই উপকারী।

ঢেঁড়সের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট শরীরের ক্লান্তি দূর করে। ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে কাজের শক্তি আনতে ক্লান্তি দূর করা একান্ত প্রয়োজন। আর তার সমাধান লুকিয়ে ঢেঁড়সে। এটি ক্লান্তি দূর করার পাশাপাশি কার্ডিও ভাসকুলার ক্ষমতাও বৃদ্ধি করে যা শরীরকে সচল ও সতেজ রাখতে অত্যন্ত প্রয়োজন।

গরমে অনেকে কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যার ফাঁদে পড়ে খুব কষ্ট পান। তাই তো তাঁরা তড়িঘড়ি খেয়ে নেন স্টুল সফটনার ওষুধ। আর আম বাঙালির এমন ওষুধ প্রীতি দেখেই চমকে ওঠেন বিশেষজ্ঞরা। এভাবে রোজ রোজ ওষুধ খেলে কিন্তু পিছু নেবে একাধিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। তাই আজ থেকেই ওষুধ খাওয়া বন্ধ করুন। তার বদলে পাতে জায়গা করে দিন ঢ্যাঁড়শের মতো একটি উপকারী ফাইবার রিচ সবজিকে। এই নিয়মটা মেনে চললেই সকাল সকাল পেট পরিষ্কার হয়ে যাবে।

গর্ভাবস্থায় ভ্রূণ তৈরির জন্য ভালো ঢেঁড়স গর্ভাবস্থায় ভ্রূণের মস্তিষ্ক তৈরিতে সাহায্য করে, মিসক্যারেজ হওয়া প্রতিরোধ করে। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় নিয়মিত ঢেঁড়স খেলে এর ফলেট উপাদানটি গর্ভের শিশুর সঠিক বিকাশে সাহায্য করে।

ঢেঁড়স কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়। ঢেঁড়সের উচ্চমাত্রার অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেলসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে।

নিয়মিত ঢেঁড়স খেলে লোহিত রক্তকণিকার উৎপাদন বেড়ে যায়। ফলে সহজেই রক্তশূন্যতা দূর হয়। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় নিয়মিত ঢেঁড়স খেলে এর ফলেট উপাদানটি গর্ভের শিশুর সঠিক বিকাশে সাহায্য করে।

ঢেঁড়সে আছে বেটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, লিউটিন যা চোখের গ্লুকোমা, চোখের ছানি প্রতিরোধে সাহায্য করে।

গলগণ্ড রোগ দূর করে ঢেঁড়স। আয়োডিনের অভাবে সৃষ্ট গলগণ্ড- রোগ এবং মস্তিষ্ক ও হৃৎপিণ্ড- দুর্বলতার প্রতিরোধে দারুণ কার্যকর। প্রতিটি ঢেঁড়সে রাইবোফ্লাভিনের পরিমাণ বেগুন, মুলো, টমেটো আর শিমের থেকে বহুগুণ বেশি।

ঢেঁড়স চুলের কন্ডিশনার হিসেবে খুব ভাল উপাদান। খুসকি দূর করতে এবং শুষ্ক মাথার ত্বকের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ঢেঁড়সের মধ্যে বেটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ থাকায় ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। সূর্যের ইউভি রস্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

ঢেঁড়স বিষণ্ণতা, দুর্বলতা এবং অবসাদ দূর করতে সাহায্য করে। ঢেঁড়সে আছে বেটা ক্যারোটিন, ভিটামিন এ, অ্যান্টি অক্সিডেন্ট, লিউটিন। এর কারণে চোখের গ্লুকোমা, চোখের ছানি প্রতিরোধে সাহায্য করে।

শরীরের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির মধ্যে একটি হল হার্ট। তাই যেন তেন প্রকারেণ এই অঙ্গের হাল ফেরাতেই হবে। আর এই কাজে আপনাকে সাহায্য করতে পারে অত্যন্ত উপকারী ঢ্যাঁড়শ। কারণ এই সবজিতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমানোর কাজে সিদ্ধহস্ত। আর ক্ষতিকর কোলেস্টেরলকে বশে আনতে পারলে যে অচিরেই হার্টের হাল ফিরবে।

ঢেঁড়সের ভেতর রয়েছে প্রচুর মাত্রায় ফাইবার, ভিটামিন এ, সি এবং ফলেট। সেই সঙ্গে রয়েছে ভিটামিন কে, বি, আয়রন, পটাশিয়াম, জিঙ্ক, ক্যালসিয়াম, মেঙ্গানিজ, ম্যাগনেসিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং বিটা ক্যারোটিন। সবকটি উপাদান একযোগে ডায়াবেটিস, অ্যাস্থেমা, অ্যানিমিয়া, ক্যানসারসহ একাধিক রোগকে দূরে রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। সেই সঙ্গে ঢেঁড়স কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। শরীর ভাল রাখতে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তেই সঙ্গী করে নিন ঢেঁড়সকে আজ থেকেই৷