ঢাকা, শুক্রবার, ডিসেম্বর ১৩, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উচ্ছেদের পর আবারও নতুন করে জমজমাট মিরপুরের বেশ কয়েকটি ফুটপাত

জনতার আলো, স্টাফ রিপোর্টার:

প্রকাশিত: ৩১ মার্চ, ২০২৪, ০৯:০০ পিএম

উচ্ছেদের পর আবারও নতুন করে জমজমাট মিরপুরের বেশ কয়েকটি ফুটপাত

দরজায় কড়া নাড়ছে মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। এর পরপরই বাঙালির প্রাণের উৎসব পহেলা বৈশাখ। কাছাকাছি দুটি উৎসবকে কেন্দ্র করে কেনাকাটা জমে উঠেছে রাজধানীর বিপণিবিতানগুলোতে। সেই সঙ্গে জমে উঠেছে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতের ভ্রাম্যমাণ ঈদ বাজার। তুলনামূলক কম দামে পছন্দের পোশাক, গয়না, জুতা, স্যান্ডেল, প্রসাধনীসহ পছন্দের পণ্য কিনতে নিম্ন আয়ের মানুষ ভিড় করছে ফুটপাত ও খোলা জায়গায় বসানো অস্থায়ী দোকানে।

শুক্রবার (২৯ মার্চ) দুপুরের পর রাজধানীর মিরপুর-১০, মিরপুর-২, মিরপুর-১৩ নম্বরের মূল সড়ক সংলগ্ন ফুটপাতে ক্রেতা-বিক্রেতাদের বেশ ভিড় দেখা যায়। নিম্ন আয়ের লোকজনকে কেন্দ্র করে এসব এলাকায় রাস্তার পাশে ফুটপাতে প্রচুর দোকান বসানো হয়েছে।

শুক্রবার যানবাহন কম থাকায় কিছু কিছু দোকান বসানো হয়েছে রাস্তার ওপর। শুধু নিম্ন আয়ের মানুষই নয়, গৃহস্থালির পণ্য, পোশাক, চাদর, বালিশসহ নানান পণ্য কিনতে উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তরাও ভিড় করছেন ফুটপাতের ভ্রাম্যমাণ দোকানে।

ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা বলেন, নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও তাদের দোকানে কেনাকাটার জন্য আসছেন। এমনকি গাড়ি নিয়েও ক্রেতারা আসছেন। কম বাজেটের মধ্যে ক্রেতাদের পছন্দ হয় এমন বাহারি নকশা ও রঙের সব পোশাকের সংগ্রহ রয়েছে ফুটপাতের দোকানে। এছাড়া বাসার গৃহস্থালি সামগ্রী ও মেয়েদের বাহারি চুড়ি এবং গয়না পাওয়া যাচ্ছে ফুটপাতে। ফুটপাতে বাহারি পণ্য থাকায় ক্রেতাদের কোনো না কোনো জিনিস পছন্দ হচ্ছে, তারা কিনেও নিচ্ছেন।

এর আগে গত ২২ মার্চ দুপুরে মিরপুর-১০ নম্বর এলাকায় হকার উচ্ছেদে অভিযান শুরু করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিরপুর বিভাগ। ওইদিন বেশ কয়েকটি সড়ক থেকে হকারদের সরিয়ে দেওয়া হয়। তবে তার তিনদিন পর অর্থাৎ ২৫ মার্চ থেকেই ফের ফুটপাতে বসেন হকাররা।

গত শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, মিরপুর-১০ নম্বর মেট্রোরেল স্টেশনের পূর্ব ও পশ্চিম পাশের ফুটপাতে বসেছেন হকাররা। এছাড়া মিরপুর-১০ নম্বর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স ট্রেনিং কমপ্লেক্সের সামনে দুপাশের ফুটপাত দখল করেছেন হকাররা। সেখানে সবচেয়ে বেশি বসেছে প্যান্ট, শার্ট ও জুতার দোকান। ফায়ার সার্ভিসের গেট থেকে শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়াম পর্যন্ত ফুটপাতে জুতা, জামা, শার্টের শতাধিক দোকান নিয়ে বসেছেন ক্রেতারা। এসব দোকানেও ক্রেতাদের ভিড় দেখা যায়।

মিরপুর-১০ নম্বরে মেট্রোরেলের দুই স্টেশনের ফুটপাতে রয়েছে জুতা, জামা, প্যান্টের অস্থায়ী দোকান। এছাড়া বসেছেন কয়েকজন ফল বিক্রেতা।

মিরপুর-১৩ নম্বর সড়কের ফুটপাতে চশমা থেকে শুরু করে জুতা, জামা সবই বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। ১০ নম্বর আইডিয়াল কলেজ ও হোপের গলিতে মেয়েদের জামা, জুতা, ব্যাগ, কসমেটিক্স আইটেমের দোকানগুলোতে উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। ঘর সাজানোর আর্টিফিশিয়াল (কৃত্রিম) গাছ ও অন্য সামগ্রীও বিক্রি করতে দেখা যায় এই ফুটপাতে।

এছাড়া মিরপুর-১০ নম্বর শাহআলী প্লাজা সংলগ্ন ফুটপাত ও মিরপুর-২ নম্বর সড়কের ফুটপাতে শার্ট, প্যান্ট ও জুতা বিক্রি করতে দেখা গেছে। শাহআলী প্লাজার বিপরীত সড়কের ফুটপাত ছিল ফল বিক্রেতাদের দখলে।

শুক্রবার মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বরের শার্ট বিক্রেতা রাজু হাসান বলেন, ‘কিছু দিন আগে উচ্ছেদ করা হয়। দু-তিনদিন আগে থেকে আমরা আবার বসছি। এভাবেই এখানে ব্যবসা হয়। সবসময় আতঙ্কে থাকি কখন উচ্ছেদ শুরু হয়। আমরাও অস্থায়ীভাবে বসতে চাই না। আমরা এর সমাধান চাই।’

ফায়ার সার্ভিসের গেটে জুতার দোকানদার শামীম আহমেদ বলেন, ‘চার বছর ধরে এখানেই ব্যবসা করছি। মাঝে মধ্যে আমাদের উঠতে বলে, আমরা উঠে যাই। তারপর আবার বসি। আমরা কোথায় যাবো? ঈদে ধারদেনা করে অনেক টাকা বিনিয়োগ করেছি।

ঈদ বাজার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বেচাকেনা ভালো। দুপুরের পর আর ইফতারের পর ক্রেতার ভিড় বেশি। আমরা স্বল্প লাভে পণ্য বিক্রি করি, ক্রেতাও খুশি থাকে।

ফুটপাত দখলের বিষয়ে কথা হয় ডিএমপির মিরপুর বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) জসিম উদ্দিন সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন আগে ফুটপাতে আমরা অভিযান চালিয়েছি। আবার হকাররা ফুটপাত দখল করে বসেছেন কি না জানি না। যদি ফের হকাররা বসেন তাহলে সংশ্লিষ্ট থানার ওসিকে ব্যবস্থা নিতে বলবো।

আইডিয়াল স্কুলের সামনের রাস্তায় মেয়েদের জামা বিক্রি করেন কামরুল। তিনি বলেন, ‘গত সপ্তাহে সমস্যা হয়েছিল। এখন প্রশাসন বসতে দিচ্ছে। ঈদের আগে কোনো ঝামেলা হবে না বলে মনে হয়।

তবে কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, স্থানীয় প্রভাবশালীরা প্রশাসনকে ম্যানেজ করে ঈদের আগে ফুটপাতে বসার অনুমতি নিয়েছেন।

ফুটপাতে দাম কেমন

ফুটপাতের বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা মেয়েদের বিভিন্ন অর্নামেন্টস (কানের দুল, আংটি) ৩০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করছেন। মেয়েদের জুতা ১৫০-৪০০ টাকা, ব্যাগ ১৫০-৫০০ টাকা, ওড়না ১০০-২৫০ টাকা, ওয়ান পিস ২৫০-৫০০ টাকা, থ্রি-পিস ৪০০ থেকে দেড় হাজার টাকা, শিশুদের ফ্রক ২০০-৪০০ টাকা, ছোট ছেলেদের প্যান্ট ২০০-৫০০, শার্ট ১৫০-৬০০ টাকা, জুতা ২০০-৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছেলেদের জিন্স প্যান্ট ৪০০ থেকে ১ হাজার টাকা, শার্ট ও পাঞ্জাবি ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকা, ফ্লিপ ফ্লপ ২০০-২৫০ টাকা, সু ও লোফার ৪০০ থেকে দেড় হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আইডিয়াল স্কুলের সামনের ফুটপাতে চুড়ি দেখছিলেন বিলাস-অর্পা দম্পতি। তাদের বাসা মিরপুর-১৪ নম্বরে। কী কী কিনছেন জানতে চাইলে বলেন, ‘বেশিরভাগ ঘরের সামগ্রী। বিছানার চাদর, পর্দা, পাপোশ। এছাড়া নিজের জন্য বেল্ট ও স্ত্রীর জন্য কানের দুল এবং চুড়ি কিনেছি। এসব টুকিটাকি জিনিস ফুটপাতেই ভালো পাওয়া যায়।

মিরপুরের কালশী এলাকার বাসিন্দা নীলা আক্তার। ছেলেকে নিয়ে কেনাকাটা করছিলেন মিরপুর-১৩ নম্বরের হোপের গলিতে। তিনি বলেন, ‘ছুটির দিন দেখে কেনাকাটায় বের হয়েছি। ছেলের জন্য দুটি শার্ট, প্যান্ট ও পাঞ্জাবি নিয়েছি। অন্য কেনাকাটাও মিরপুর-১০ নম্বরের মার্কেট থেকে করা হয়েছে।

ফুটপাতে কেনাকাটা প্রসঙ্গে এই গৃহিণী বলেন, ‘শপিংমলে একদাম। দামাদামির সুযোগ দেয় না। ফুটপাতে দেখেশুনে ও দামাদামি করে কেনাকাটার সুযোগ আছে। এখন ফুটপাতেও ভালো জিনিস পাওয়া যায়।