চুরি বা ছিনতাই হওয়া মোবাইলফোন খুঁজে পেতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আইএমইআই নম্বর। কিন্তু চক্রটি সেই আইএমইআই নম্বরটি পাল্টে ফেলছে ৩-৭ সেকেন্ড সময়ের মধ্যে।
এরপর কোনো মোবাইল মেরামতের দোকান হয়ে কিংবা সরাসরি অন্যকোনো জনসাধারণের হাতে চলে যাচ্ছে সেসব মোবাইল। আর আইএমইআই নম্বর পাল্টে ফেলায় খোয়া মোবাইল উদ্ধার করা যাচ্ছে না বা উদ্ধার কষ্টসাধ্য হয়ে যাচ্ছে।
দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর ধরে মোবাইল চুরি-ছিনতাই ও আইএমইআই পাল্টে বিক্রি করে আসা পৃথক চারটি চক্রের ২০ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৩)। চক্রটি এখন পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজারের বেশি মোবাইলের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করে বিক্রি করেছে।
গ্রেফতাররা হলেন- হাফিজুর রহমান (৩৫), রনি আহমেদ ইমন (২৯), জসিম উদ্দিন (৩৫), জামাল উদ্দিন (৫০), আবুল মাতুব্বর (৪২), আহম্মদ আলী (৩৫), কামাল (৪০), বাপ্পি (২৯), আবিদ হোসেন সনু (৩৮), রবিন ভুইয়া (২১), আরিফুল হোসেন (২২), ইব্রাহিম মিয়া (৪০), সুজন (২৯), দেলোয়ার (৩৩), আব্দুর রহমান (১৯), রাজু (২৭), জিহাদ হোসেন (২৪), মুনাইম (৩৮), রাজু (৪৫) ও রফিক (৩৮)।
১ এপ্রিল রাতে ধারাবাহিক অভিযানে ঢাকার গুলিস্তান, শনির আখড়া, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও এবং নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫৪২টি স্মার্ট মোবাইলফোন, ৩৪১টি বাটন মোবাইল ফোন, বিপুল পরিমাণ ভুয়া আইএমইআই স্টিকার, ১টি হিটগান, ইলেকট্রনিক সেন্সর ডিভাইস, আইএমইআই পরিবর্তনের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন টুলস, ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত ৬টি চাকু, ১টি ল্যাপটপ, ১টি এলসিডি মনিটর ও নগদ ১১ হাজার ৬০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। ২০ হাজারের বেশি মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করেছেন তারা
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র্যাবের লিগ্যাল অ্যন্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে মোবাইল সিন্ডিকেট চক্রের অবৈধ মোবাইল ক্রয়-বিক্রয়ের তৎপরতা বেড়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। তারা দীর্ঘ ৫-৬ বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মোবাইল চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িত। তারা মোবাইল চুরি, ছিনতাই ও আইএমইআই পরিবর্তনের হোতা।
চক্রটি চোরাই মোবাইলগুলো বিক্রির জন্য বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্রেফতার আব্দুর রহমান, রবিন ও হাফিজুর রহমান মোবাইল ছিনতাই করে চক্রের মূলহোতা রাজু, সুজন ও আবুল মাতুব্বরসহ অন্যান্যদের কাছে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে দেয়। তারা অন্যান্য ছিনতাইকারির কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া মোবাইল স্বল্পমূল্যে কিনে নেয়।
গ্রেফতার দেলোয়ার এবং আবুল মাতুব্বর মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তনের অন্যতম কারিগর। তারা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ছিনতাই হওয়া মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করে।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন আরও বলেন, দেলোয়ারের চক্রটি গুলিস্তান এলাকায় সক্রিয়। আরিফুলের চক্র নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও, আবুল মাতুব্বরের চক্র মোহাম্মদপুর এলাকায় ও ইমনের চক্রটি খিলগাঁও এলাকায় সক্রিয়।
২০ হাজারের বেশি মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করেছেন তারা আইএমইআই পরিবর্তনের পাশাপাশি কখনো কখনো মোবাইলের ক্যাসিন, ডিসপ্লেও পরিবর্তন করে ফেলে। এ পর্যন্ত তারা ২০ হাজারের বেশি মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করে বিক্রি করেছে।
তিনি আরও বলেন, ব্র্যান্ড এবং কোয়ালিটিভেদে এসব মোবাইলের দাম ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ভালো মানের মোবাইলগুলো তারা মোবাইল মেরামত করার দোকানে বিক্রি করে। আর অন্য মোবাইল বিভিন্ন মার্কেটের সামনে ভ্রাম্যমাণ বিক্রয় করে আসছিল।
গ্রেফতার দেলোয়ারের সহযোগী রাজু এবং জিহাদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। আরিফুলের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় মামলা রয়েছে।
এছাড়া, মোনায়েম, রফিক ও আরিফুল আগেও র্যাবের হাতে আটক হয়েছিলেন। পরে তারা জেল থেকে বেরিয়ে আবারও এই চক্রে জড়িয়ে পড়ে।